শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫১ পূর্বাহ্ন
রাহাদ সুমন,বিশেষ প্রতিনিধি॥ সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ রাজনীতির এক “যোগ্য উত্তরাধিকার”। বংশ পরম্পরায় যার ধমনীতে বাঙালী জাতির অবিসংবাদিত নেতা হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের রক্ত প্রবাহিত।
বাবার আপন মামা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান,ফুফু প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা,দাদা “কৃষককুলের নয়নের মণি” সাবেক মন্ত্রী আব্দুর রব সেরনিয়াবাত এবং পিতা আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ (মন্ত্রী)’র আদর্শের সিঁড়ি পথ বেয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালরাতে বাবা ও মায়ের সঙ্গে অলৌকিকভাবে বেঁচে যাওয়া স্বজনের রক্তে ভেজা সেই সময়ের দেড় বছরের শিশু আজকের বরিশালের রাজনীতির ‘আইকন’ যুবরত্ন সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ নিজেকে যোগ্য উত্তরাধিকার হিসেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছেন। স্বল্প সময়ের মধ্যে তিনি নিজের মেধা,প্রজ্ঞা ও রাজনৈতিক দূরদর্শিতা দিয়ে পাদ প্রদীপের আলোয় উঠে আসা এক “উদীয়মান সূর্য”।যার আলোয় “আলোকিত” বরিশালের আওয়ামী রাজনীতির অঙ্গন। শুধু তাই নয় বিগত সময়ের চেয়ে বর্তমানে তার নেতৃত্বে বরিশালে আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সহযোগী সংগঠন সুশৃঙ্খল ও সুসংগঠিত। সাদিক আবদুল্লাহ বরিশাল সিটি নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মনোনীত মেয়র প্রার্থী হিসেবে সর্বাপেক্ষা আলোচিত ও জনপ্রিয় এক নেতা।তার দাদা বিশিষ্ট আইনজীবি,সাংবাদিক ও রাজনীতিক আব্দুর রব সেরনিয়াবাত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শুধু ভগ্নিপতিই ছিলেন না, বিশ্বস্ত এক অকৃত্রিম বন্ধুও ছিলেন।
উচ্চ শিক্ষার জন্য কোলকাতা ইসলামিয়া কলেজে ভর্তি হয়ে বেকার হোস্টেলে থাকার সময় আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের সঙ্গে তৎকালীণ উদিয়মান ছাত্র নেতা শেখ মুজিবুর রহমানের পরিচয় ঘটে। ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে মায়ের মুখের ভাষা প্রতিষ্ঠা ও সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতার লাল সূর্য ছিনিয়ে আনতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে সতীর্থ সহযোদ্ধা ছিলেন আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। দু’জনের আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক এক সময় বন্ধুত্ব থেকে আত্মীয়তার চির বন্ধনে রূপ নেয়। মুক্তিযুদ্ধে তিনি জোনাল চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্ব বিবেকের সামনে মুক্তিযুদ্ধের বিশাল ভাবমূর্তি নির্মাণের অন্যতম কারিগর ছিলেন গণ মানুষের নেতা আব্দুর রব সেরনিয়াবাত। স্বাধীনতা অর্জনের পরে বিভিন্ন সময় তিনি ভূমি প্রশাসন,বন, মৎস্য ও পশু সম্পদ,বিদ্যুৎ, সেচ ও পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব পালণ করলেও তিনি বারে বারে ছুঁটে যেতেন নিজের আপন ঠিকানায় অর্থাৎ কৃষক সম্প্রদায়ের মাঝে।
কৃষকের মনের ভাষা যেমন তিনি বুঝতেন ঠিক তেমনী মেহনতি কৃষক শ্রেণীও তাকে আত্মার আত্মীয় হিসেবে গভীর ভাবে উপলব্দি করতে পারতেন। তাইতো কালক্রমে তিনি হয়ে ওঠেন “কৃষককুলের নয়নের মনি”। তিনি মন্ত্রী হলেও সাধারণের কাছে তিনি ছিলেন তাদেরই লোক। তার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে ভারতের ঐতিহাসিক “ফারাক্কা” চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিলো। ভূমি ব্যবস্থার সংস্কার,ভূমিহীন কৃষককে খাস জমি দান,পরিবেশ ও বনায়ন,ভূমিহীনদের জন্য সমবায় গ্রামের পরিকল্পনা,বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস নিয়ন্ত্রণে উপকুলীয় বৃক্ষ রোপণ পরিকল্পনা, সেচ,খাল ও নদী খননের প্রকল্প, বাংলার হারানো ঐতিহ্য তুলা চাষের জন্য উন্নয়ন বোর্ড গঠন এবং তুলা চাষের প্রবর্তন এমনি আরও অনেক ভূমিকা রয়েছে তার এ মাটি ও মানুষের কল্যাণে। নির্মোহ ও সৎ রাজনীতিকের পথিকৃৎ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতকে ১৫ আগষ্ট কালরাতে জাতির জনকের পরিবারের সঙ্গে ঘাতকরা হত্যা করেছে দেশকে নেতৃত্বশূন্য করার অভিলিপ্সায়। এদিকে ১৯৯৭ সালে অশান্ত পার্বত্য অ লে শান্তির সুবাতাস বইয়ে দিতে ‘শান্তি চুক্তি’ সম্পাদনের মাধ্যমে তৎকালীণ জাতীয় সংসদের চীফ হুইপ চেহারার অবয়বে “বঙ্গবন্ধুর প্রতিচ্ছ্বায়া” আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ অগ্রণী ভূমিকা পালন করে বঙ্গবন্ধু তনয়া প্রধানমন্ত্রী ও আ’লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি ইতিহাসের পাতায় তারও নাম লিখিয়েছেন। ১৯৭১ সালে মামা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আহবানে সাড়া দিয়ে সেই সময়ের সাহসী
টগবগে যুবক আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ “স্বাধীনতার লাল সূর্য” ছিনিয়ে আনতে বরিশাল অ লে “মুজিব বাহিনী” প্রধান হিসেবে মৃত্যুকে পায়ের ভৃত্য মনে করে সন্মূখ সমরে জীবন পণ লড়াই করে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ বির্নিমানে অগ্রণী ভূমিকা পালণ করেন। স্বাধীনতার পর তিনি তরুন বয়সে বরিশাল পৌরসভার সফল ও জনপ্রিয় চেয়ারম্যান হিসেবে উন্নয়ন কর্মকান্ডে নিজেকে সম্পৃক্ত করেন। পরবর্তীতে বরিশাল-১(আগৈলঝাড়া-গৌরনদী) আসনে একাধিকবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে গোটা বরিশালে উন্নয়নের রূপকার হিসেবে আবির্ভূত হন।
বরিশাল সিটি কর্পোরেশন,বিভাগ,শিক্ষা বোর্ড,বিশ্ববিদ্যালয়,পাসর্পোট অফিস,পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর প্রতিষ্ঠা,শেখ হাসিনা সেনানিবাস,দোয়ারিকা-শিকারপুর ও দপদপিয়া ব্রিজ নির্মাণ সহ বরিশালের সার্বিক উন্নয়নে তার অপরিসীম ভূমিকা রয়েছে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট কালরাতে রক্তঝড়া অচিন্তনীয় বিয়োগান্তক অধ্যায়ের শোকগাঁথায় মামা জাতির জন্ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারের সঙ্গে বাবা তৎকালীন মন্ত্রী ও কৃষক কুলের নয়নের মনি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ও নিজের শিশু পুত্র সুকান্ত বাবু আবদুল্লাহ সহ পরিবারের অনেক স্বজনকে হারান তিনি। সেদিন রাতে মৃত্যুর দুয়ার থেকে মহান আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের অপার কৃপায় অলৌকিকভাবে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ,বুলেটবিদ্ধ স্ত্রী শাহানারা আবদুল্লাহ ও তার কোলে থাকা দেড় বছরের শিশু পুত্র সাদিক আবদুল্লাহ বেঁচে যান। শরীরে ৫টি বুলেট বহন করে অসহ্য যন্ত্রনা নিয়ে শাহানারা আবদুল্লাহ স্বামী আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও পুত্র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর মতো আ’লীগের সুখ-দুঃখের অংশীদার। ৭৫’র পর সেনাশাসক জিয়াউর রহমান, স্বৈরশাসক এরশাদ ও বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে (৯১-৯৬ ও ২০০১-২০০৬) মিথ্যা মামলা সহ নানা ভাবে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ ও তার পরিবারকে হয়রানির শিকার হতে হয়। ১/১১’র সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলেও ষড়যন্ত্রের শিকার হন ঐতিহ্য সমৃদ্ধ এ পরিবারটি। তবে সকল চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্রের মাঝেও এ পরিবারটি বরিশালে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের একমাত্র ভরসাস্থল ও শেষ ঠিকানা। স্বাধীনতার পরে বরিশাল অ লে দৃশ্যমান যতো বৃহৎ উন্নয়ন কর্মকান্ড হয়েছে তার শুরুটা করেছিলেন শহীদ আ.রব সেরনিয়াবাত এবং অব্যাহত রেখেছেন তার সুযোগ্য পুত্র আলহাজ্ব আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ।
তাইতো গৌরব ও ঐতিহ্যের “যোগ্য উত্তরাধিকার” সাদিক আবদুল্লাহকে ঘিরে আগামীর উন্নত,আধুনিক ও আলোকিত এক “তিলোত্তমা” বরিশাল নগরীর “স্বপ্নের” জাল বুনছেন নগরবাসী।
Leave a Reply